ভূমি গঠন ও মানব বসতি ভূ-প্রকৃতি অনুযায়ী বাংলাদেশের ভূমি মোটামোটি তিন ভাবে বিভক্ত। (১) লাল মাটিতে গঠিত প্রাচীন ভূমি (২) পলি মাটিতে গঠিতে মোটামোটি প্রাচীন ভূমি (৩) পলি মাটিতে গঠিত নিম্ন ভূমি। দক্ষিণ পশ্চিম ময়মনসিংহের এক পশ্চাৎপদ জনপথের নাম ফুলবাড়ীয়া। যার আয়তন ৩৯৯ বর্গ কিঃ মিঃ। প্রত্নতত্ত্ববিদ, নৃ-বিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিকদের মতে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ভূমি হলো লাল মাটি দ্বারা গঠিত। বাংলাদেশের নাল মাটি দ্বারা গঠিত এলাকাগুলো হলো- উত্তরাঞ্চলে রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর জেলার অধিকাংশ অঞ্চল, ময়মনসিংহ জেলার ভাওয়াল, মধুপুর বন যার বিস্তৃতি নরসিংদী জেলার ওয়ারী বটেশ্বর পর্যন্ত। এর পর অনেক দূরে কুমিল্লা হতে শুরু করে পূর্ব দিকে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এ মাটির অস্থিত্ব বিদ্যমান। ফুলবাড়ীয়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকা মধুপুর ভাওয়ালের লালমাটি দ্বারা গঠিত ভূমি সম্প্রসারিত অংশ। ফুলবাড়ীয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব অংশ লাল মাটি দ্বারা গঠিত। উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব অংশ মোটামোটি প্রাচীন পলি ও দোআঁশ মাটি দ্বারা গঠিত।
ভূমিগত বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করলে বাংলাদেশের যেসকল স্থান প্রাচীনতার দাবী করতে পারে তার মধ্যে ফুলবাড়ীয়া অন্যতম। যার প্রমাণ লাল মাটি দ্বারা গঠিত এ অঞ্চলের ভূমি। পরবর্তী সময়েও যে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা পিছিয়ে ছিল না তার উদাহারণ পুটিজানার রায় বংশের জমিদার। যাদের নিকট হতে মুক্তাগাছার জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী কৃষ্ণ আচার্য জমিদারী ক্রয় করেছিলেন। জোড়বাড়ীয়ায় ১২০০ হিজরীতে নির্মিত মসজিদটি অত্র এলাকার সমৃদ্ধির সাক্ষ্য বহন করে। ঘাটাইলে অবস্থান হলেও ভৌগলিকভাবে উক্ত বিন্দাবনের অবস্থান ফুলবাড়ীয়ার সন্নিকটে। ঐতিহ্যবাহী জেলা ময়মনসিংহ এর অংশ ফুলাবাড়ীয়া উপজেলা। যা পূবতন আলেক শাহী বা আলাপ সিংহ পরগনার অংশ।
আলাপসিংহ পরগনা আইন-ই-আকবর-ই গ্রন্থে আলেকশাহী নামে লিখিত হইয়াছে। এই পরগনা পূর্বে জঙ্গলবাড়ীর ২২ পরগনাভূক্ত ছিল। শপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে তাহা পুনরায় বড়বাজুর চন্দ্র ও পুটিজানার রায়দিঘের হস্তগত হয়। নবাব আলীবর্ধি খার সময়ে ১৩৩২ ও ১১৩৩ বঙ্গাব্দে মুক্তাগাছার বর্তমান জমিদার বংশের পূর্ব পূরুষ শ্রী কৃষ্ণ আচার্য পুটিজানার রাম চন্দ্র ও ভবানীদেব রায় হইতে জমিদারী দুই খন্ড ক্রয় করেন।
নাম করণ : ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীনকালে ফুলবাড়ীয়ায় ফুলখড়ি এক ধরণের লাকড়ী জাতীয় গাছ জন্মাত। যা অত্র এলাকার মানুষ লাকড়ী হিসাবে ব্যবহার করত। ফুলবাড়ীয়ার পূর্ব নাম ছিল গোবিন্দ গঞ্জ। ধারণা করা হয়ে থাকে ফুলখড়ি থেকেই ফুলবাড়ীয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে। ইতিহাসবিদগণ মনে করেন এক সময় ফুলবাড়ীয়ায় বাংলাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধশালী জনপথ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই এলাকায় ইক্ষু ও ইক্ষুজাত দ্রব্য চিনি ও গুড় দেশে বিদেশে পরিচিত ছিল। গ্রীক লেখক ঈলিয়ন তার লেখায় বলেন ইক্ষু নল পেষন করিয়া এক প্রকার মিষ্ট রস আহরণ করিত গঙ্গাতীর বাসীর লোকেরা। এসমস্তই খ্রীষ্টপূর্ব শতাব্দীর কথা। বর্তমান ইতিহাসদদের ধারণা ঐতিহাসিক চিনি যা ইক্ষু রস হতে উৎপাদন করা হত বর্তমানেও রয়েছে। এই চিনি এক সময় ফুলবাড়ীয়ার লাল চিনি নামে পরিচিত ছিল। কালের বিবর্তনে লাল চিনি নাম ধারণ করে সভ্যতার সাক্ষী হয়ে ফুলবাড়ীয়া ও ত্রিশালের কিছু এলাকায় কৃষকের ঘরে ঘরে বেঁচে আছে। বয়স্ক ব্যক্তিদের মতে আজ থেকে ৭০/৮০ বছর পূর্বে অত্র এলাকার চিনি বলতে বর্তমান লাল চিনিকেই বুঝায়।
১৮৬৪ সালে প্রশাসনিকভাবে ফুলবাড়ীয়া থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কিছুলোকের প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার বলে ফুলবাড়ীয়া থানার সীমানা নির্ধারণ করা যায়নি। পরবর্তীতে ১৮৬৭ সালে ফুলবাড়ীয়া থানার সীমানা নির্ধারণ হয় এবং ফুলবাড়ীয়া থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালের ০২ জুলাই ফুলবাড়ীয়া উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS